রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ১০:০৮ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মানুষের সব গোনাহ কি মাফ হয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কবিরা ও সগিরা সব গোনাহ কি মাফ হয়? বহুজনের এমন প্রশ্নের উত্তর হলো হ্যাঁ, আল্লাহতায়ালা চাইলে সব গোনাহই মাফ করতে পারেন। তবে তিনি কোরআন মাজিদে বলে দিয়েছেন, তিনি শিরকের গোনাহ মাফ করবেন না। এ ছাড়া অন্যান্য গোনাহ মাফ করবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে অংশী (শিরক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।’ সুরা আন নিসা : ৪৮, ১১৬

শিরক ছাড়া অন্য করিরা গোনাহগুলো মাফ পেতে সাধারণত তওবা করার দরকার হয়। কিন্তু সগিরা গোনাহ মাফের জন্য সব সময় তওবার প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কিছু আমলের মাধ্যমে এসব গোনাহ মাফ হয়ে যায়। তাই কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকলে সগিরা গোনাহ আল্লাহতায়ালা মাফ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কবিরা গোনাহ বা গুরুতর পাপগুলো পরিহার করো, তাহলে আমরা (আল্লাহ) তোমাদের (ছোট) লঘুতর পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাব।’ সুরা আন নিসা : ৩১

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘যারা ছোটখাটো অপরাধ ছাড়া কবিরা গোনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে। নিশ্চয়ই তোমার রব অপরিসীম ক্ষমাশীল।’ সুরা আন নাজম : ৩২

এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যে সংঘটিত (সগিরা) গোনাহ মুছে ফেলে, যদি কবিরা গোনাহ থেকে সে বেঁচে থাকে তাহলে (নতুবা নয়)।’ সহিহ মুসলিম : ৫৭৪

অর্থাৎ কেউ যদি ফজরের নামাজ আদায় করে, তারপর জোহরের সময় জোহরের নামাজ আদায় করে তাহলে সে ফজরের নামাজের পর থেকে জোহরের নামাজ পর্যন্ত যেসব সগিরা গোনাহ করেছে, জোহরের নামাজ আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে তার সেই গোনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। এ রকমই এক সপ্তাহে জুমার নামাজ আদায় করে পরের সপ্তাহের জুমার নামাজ আদায় করলে এই দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সগিরা গোনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। একইভাবে এ বছর যারা রমজান মাসের রোজা পালন করেছে এবং পরবর্তী বছরও রমজানের রোজা পালন করলে তার এই দুই রমজানের মাঝের এক বছরের সগিরা গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। শর্ত হচ্ছে, এই সময়গুলোতে কবিরা গোনাহ করা যাবে না। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সেসব পাপের মোচনকারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি কবিরা গোনাহগুলো তাকে আবিষ্ট না করে (সে কোনো কবিরা গোনাহ না করে)।’ সহিহ মুসলিম : ৫৭২

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ উপস্থিত হলে উত্তমরূপে অজু করবে। (অতঃপর) উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপে রুকু করবে। তাহলে এটা তার নামাজ পূর্বে সংঘটিত কবিরা গোনাহ ছাড়া অন্যান্য পাপরাশি মাফের অবলম্বন হয়ে যাবে। আর এ বিধান সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।’ সহিহ মুসলিম : ৫৬৫

সাধারণভাবে ভালো কাজ খারাপ কাজকে মুছে ফেলে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই ভালো কাজগুলো মন্দকাজগুলোকে মিটিয়ে দেয়।’ সুরা হুদ : ১১৪

বর্ণিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, কবিরা গোনাহ ছাড়া অন্যান্য গোনাহ আল্লাহতায়ালা সাধারণ নেককাজের মাধ্যমে এমনিতেই ক্ষমা করে দেন। এজন্য বিশেষ তওবা জরুরি নয়। বিভিন্ন আমলের মাধ্যমেই এসব গোনাহ মাফ হয়ে যায়।

তবে বিভিন্ন হাদিস দ্বারা জানা যায়, কিছু কিছু কবিরা গোনাহও বিশেষ পরিস্থিতিতে আল্লাহতায়ালা সৎকর্মের মাধ্যমে ক্ষমা করে দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হজরত জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে (শিরক না করে) মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবু? তিনি বললেন, যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবু।’ সহিহ বোখারি : ৬৪৪৪

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি সেই জান্নাতি ব্যক্তি সম্পর্কে জানি, যে সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সবার শেষে জাহান্নাম থেকে বের হবে। সে এমন এক ব্যক্তি, যাকে কিয়ামতের দিন হাজির করা হবে এবং বলা হবে, ওর ছোট পাপগুলো ওর কাছে পেশ করো এবং বড় পাপগুলো তুলে নাও। তারপর তার ছোট পাপগুলো তার কাছে পেশ করা হবে এবং বলা হবে, তুমি অমুক দিনে এই পাপ করেছো, অমুক দিনে এই এই পাপ করেছো? সে বলবে, হ্যাঁ। সে তো অস্বীকার করতে পারবে না। সে তার বড় পাপগুলো পেশ করার ভয়ে ভীত থাকবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, তোমার প্রত্যেক পাপের স্থলে একটি করে পুণ্য দেওয়া হলো। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি তো অনেক কিছু (এমন পাপ) করেছি, যা এখানে আমি দেখতে পাচ্ছি না। এ ঘটনা বর্ণনা করে নবী করিম (সা.) এমনভাবে হেসে ফেললেন যাতে তার মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে গেল।’ সহিহ মুসলিম : ৪৮৭

এসব বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহতায়ালা বিশেষ প্রেক্ষাপটে কিছু কবিরা গোনাহ বান্দার অজান্তে তওবা ছাড়াও মাফ করে দেন। কবিরা গোনাহ ক্ষমা সম্পর্কে কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, ‘কবিরা গোনাহ শুধু তওবা অথবা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের মাধ্যমে মাফ হয়। আল্লাহ অধিক জানেন।’ শারহু সহিহ মুসলিম

এ বিষয়ে একশ্রেণির আলেমের অভিমত হলো, আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যমূলক বিভিন্ন কাজ এবং ফরজ আমল সগিরা গোনাহ মাফের কারণ; তবে এগুলো কবিরা গোনাহ মাফ করায় না। কবিরা গোনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য অবশ্যই তওবা করতে হবে।

অবশ্য আরেক দল আলেম বলে, ‘আমরা এরূপ কথা বলা (মতভেদ করা) থেকে নীরব থেকে আল্লাহর কাছে এই আশা রাখব, তিনি (সগিরা-কবিরা) সব গোনাহই ক্ষমা করে দেবেন। বিশেষ করে যখন হাদিসে বলা হয়েছে, তার পাপ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ হয়ে যাবে। আর আল্লাহর কাছে এই আশা রাখব, কবিরা গোনাহ থেকে বিরত না থাকলেও সে ক্ষমা বহাল থাকবে। বলা বাহুল্য, এ কথা বিচ্যুতি থেকে অধিক দূরে এবং আশার ব্যাপারে বেশি বলিষ্ঠ।’ শারহু বুলুগিল মারাম বস্তুত আল্লাহতায়ালা গাফুর (ক্ষমাশীল), রাহিম (দয়ালু); তিনি চাইলে যেকোনো অসিলায় সব গোনাহ মাফ করে দিতে পারেন। অতএব, সর্বদা গোনাহ মাফের ব্যাপারে আশাবাদী থাকা, কখনো হতাশ বা নিরাশ না হওয়া।

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION